Fact Check: না, যেমন দাবি করা হচ্ছে তা নয়, কংগ্রেস ভারতীয় নৌবাহিনীর নিশান হিসাবে সেন্ট জর্জ ক্রস ফিরিয়ে আনেনি

0 423

ভারতীয় নৌবাহিনীর দেশীয় বিমানবাহী বাহক আইএনএস বিক্রান্ত যখন ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২–এ কোচিতে কমিশন করা হচ্ছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নৌবাহিনীর নতুন পতাকা উন্মোচন করেছিলেন, যাতে সেন্ট জর্জ ক্রস ছিল না। ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্রেস্টে বর্তমানে একটি নেভি ব্লু ব্যাকড্রপ এবং একটি অষ্টভুজ রয়েছে যা ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের রাজকীয় সিলমোহরের প্রতীক, যিনি তাঁর দূরদৃষ্টি দিয়ে সামুদ্রিক সীমানা রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন।

এই পটভূমিতে, অনেক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী একটি ক্যাপশন সহ বিভিন্ন সময়ের ভারতীয় নৌপতাকার ছবি শেয়ার করছেন। তাঁরা দাবি করেছেন যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার সেন্ট জর্জ ক্রস–কে ভারতীয় নৌবাহিনীর পতাকা থেকে অপসারণ করার পর কংগ্রেস তা ফিরিয়ে এনেছিল। এভাবে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে কংগ্রেস  ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে বেরোতে পারে না।

পোস্টের সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “১৫ আগস্ট ২০০১ সালে শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীজি নৌবাহিনীর পতাকার নকশার পরিবর্তন করেছিলেন, এবং ক্রসটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ২০০৪ সালে সোনিয়া গান্ধী আবার ভারতীয় নৌবাহিনীর পতাকা পরিবর্তন করেছিলেন এবং পতাকায় সেন্ট জর্জের ক্রস যুক্ত করেছিলেন।”

এই পোস্টের লিঙ্ক পাওয়া যাবে এখানে (here)।

FACT CHECK

নিউজমোবাইল এর একটি সত্য-পরীক্ষা করেছে, এবং দেখেছে দাবিটি বিভ্রান্তিকর।

গুগলে উপযুক্ত কিওয়ার্ড দিয়ে অনুসন্ধান করার সময় আমরা দ্য অয়্যার (‌ The Wire )‌ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পেয়েছি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাধীনতার তিন বছর পর ১৯৫০ সালে ভারতীয় নৌবাহিনীর পতাকা পরিবর্তন করা হয়েছিল। সেই সময় ক্রুসেডার খ্রিস্টান শহিদ তথা ব্রিটেনের পৃষ্ঠপোষক সন্ত সেন্ট জর্জ–এর নামাঙ্কিত ক্রসের পাশাপাশি দেশের ত্রিবর্ণ এবং সম্রাট অশোকের সিংহের প্রতীক যোগ করা হয়।

তারা আরও বলেছে যে ১৫ আগস্ট, ২০০১-এ ঔপনিবেশিক পটভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য সেন্ট জর্জ ক্রস তুলে দিয়ে নৌবাহিনীর ক্রেস্ট, যার মধ্যে প্রধানত একটি অশোক সিংহ এবং নিচে কেন্দ্রস্থলে একটি নোঙ্গর অন্তর্ভুক্ত ছিল, তা রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার এই পরিবর্তন করেছিল। তেরঙ্গা যেখানে রাখা হয়েছিল সেখানেই রয়ে গেছিল।

পরে, এর নীল রঙ আকাশ এবং তরঙ্গের সঙ্গে মিশে গেছে বলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, ২০০৪ সালে নৌবাহিনীর পতাকায় জর্জ ক্রস সহ তার পুরনো নকশা ফিরে আসে। ত্রিকোণটি বরাবরের মতোই থেকে যায়, একমাত্র সংযোজন করা হয় ক্রসের কেন্দ্রে অশোকের সিংহের প্রতীক।

২৪ এপ্রিল, ২০০৪-এ প্রকাশিত রিডিফ ইন্ডিয়া অ্যাব্রডের (‌ Rediff India Abroad )‌ একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতীয় নৌবাহিনী কিছু ভারতীয় ছোঁয়া দিয়ে ক্রসটিকে পতাকায় ফিরিয়ে আনে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, “যখন থেকে নৌবাহিনী তার অফিসারদের পতাকা এবং আলাদা আলাদা প্রতীক ও পেনড্যান্টগুলিতে ব্যাপক পরিবর্তন করেছিল, তখন থেকে একটি অভিযোগ ছিল, এবং বিশেষ করে যারা সমুদ্রে গিয়েছিলেন তাঁদের অভিযোগ ছিল যে পতাকাগুলি সমুদ্রের ও আকাশের নীল রঙের সঙ্গে মিশে যাওয়ায় তা দূর থেকে দেখা যেত না। এই ত্রুটিগুলি কাটিয়ে উঠতে এবং জাতীয় প্রতীকগুলিকে আরও ভালভাবে উপস্থাপন করার জন্য এটি ২৫ এপ্রিল থেকে একটি নতুন পতাকা, নৌ চিহ্ন এবং পেনড্যান্ট প্রবর্তন করছে। সেদিন প্রায় এক বছর ধরে বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়ানো প্রশিক্ষণ জাহাজ আইএনএস তরঙ্গিনী ভারতে ফিরে আসবে।”

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে আইএনএস তরঙ্গিনিকে স্বাগত জানানোর সময় রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম কোচিতে নতুন নকশাগুলি উন্মোচন করেছিলেন।

নতুন পতাকা এবং পেনড্যান্ট সম্পর্কে লোকসভায় (‌ Lok Sabha )‌ একটি তারকাখচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেনন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, “নতুন নৌ পতাকা, স্বতন্ত্র পতাকা এবং পেনড্যান্টগুলি ২৫ এপ্রিল, ২০০৪ থেকে চালু করা হয়েছে। পরিবর্তনের কারণ ছিল যে আগের পতাকাগুলিতে একটি নীল ও সাদা রঙের সমন্বয় ছিল, যা দূর থেকে স্পষ্টভাবে দেখা যেত না, বিশেষ করে সমুদ্র।”

একটি ওয়েবসাইট, আর্কাইভ পিএমও অনুসারে, মনমোহন সিং (‌ Manmohan Singh )‌ ২২ মে, ২০০৪-এ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। যেহেতু ২২ মে, ২০০৪-এর আগেই পতাকাটি পরিবর্তন করা হয়েছিল, আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে ঘটনাটি অটল বিহারী বাজপেয়ীর শাসনের সময়েই ঘটেছিল।

এইভাবে আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে ভাইরাল দাবিটি বিভ্রান্তিকর।